বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি : সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আলোচিত পুলিশ এসল্ট মামলায় রায় গতকাল ১ জুন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এর মাননীয় বিচারক মোঃ আকসার হোসেন। প্রায় ৫ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। মাননীয় আদালত প্রদত্ত রায়ে মামলার এজাহারভুক্ত ২২জন আসামীর মধ্যে ১৯ জনকে দোষী সাবস্থ্য করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছেন। অপর ৩ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই দুপুর ১ঘটিকায় স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সরকারের গুম, খুন, দুর্নীতি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যে মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে এক বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি শহরের নিউ মার্কেটর সম্মুখে পৌছার পর পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এক পর্যায় পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে মিছিল করতে গেলে পুলিশ মিছিলে থাকা নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে পুলিশের সাথে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে হামলা পাল্টা হামলা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বেদড়ক লাঠিচার্জ করে মিছিলকারীদের হটিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে আটক ৪ জনসহ ২২ জনকে আসামী করে ঐদিন রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে বিয়ানীবাজার থানায় একটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করে, মামলা নং ২০।
উক্ত মামলার আইনী ও বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর গত ১ জুন বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এর মাননীয় বিচারক রায় ঘোষণা করেন। আদালতের রায়ে মামলার এজাহারভুক্ত ২২ জন আসামীর মধ্যে ১৯ জনকে দোষী সাবস্থ্য করে কারাদন্ড ও ৩ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে, ৯ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের রহিম উদ্দিনের পুত্র আলী হোসেন, শ্রীধরা গ্রামের নিমার আলীর পুত্র দেলোয়ার হোসেন, কসবা গ্রামের মোঃ আব্দুল আজিজ এর পুত্র মোঃ আফজল আহমদ, খাসা গ্রামের রইছ আলীর পুত্র তাজ উদ্দিন, ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের ময়নুল হোসেন এর পুত্র জুনেদ আহমদ, কসবা গ্রামের আব্দুল মন্নানের পুত্র সুমন আহমদ, খাসাড়ীপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র হাসান আহমদ, নিদনপুর গ্রামের মাহমুদ হোসেনের পুত্র ছাইদ হোসেন, কসবা গ্রামের আব্দুন নুরের পুত্র আখতার হোসেন অনিক।
অপর ১০ জনকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরো ৩ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন কসবা গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র ফারুক আহমদ, নয়াগ্রামের করিম উদ্দিনের পুত্র বাছিত উদ্দিন, ফতেহপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র ফখরুল ইসলাম, দুবাগ গ্রামের রইছ আলীর পুত্র সাহেদ আহমদ, দাসউরা গ্রামের আমীর আলীর পুত্র জাহেদ হোসেন, সুপাতলা গ্রামের সাইদ আহমদের পুত্র মনি আহমদ, খশির গ্রামের এনায়েত হোসেন এর পুত্র রাজু আহমদ, কোনাগ্রামের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র আলমগীর হোসেন, মাথিউরা গ্রামের আপ্তাব আলীর পুত্র নজমুল ইসলাম, ও পাতন গ্রামের নিজাম উদ্দিনের পুত্র মামুন আহমদ।
এছাড়া অপর ৩ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। খালাস প্রাপ্তরা হলেন বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা গ্রামের রহিম উদ্দিনের পুত্র লিমন আহমদ, জলঢুপ গ্রামের নাজিম মিয়ার পুত্র আজাদ উদ্দিন ও কসবা গ্রামের জাবেদ হোসেনের পুত্র মস্তাক আহমদ।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি মোঃ নিজাম উদ্দিন পিপি বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
আসামী পক্ষের আইনজীবি মোঃ আবুল কাশেম বলেন, এই রায়ে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে। রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। তাই এই রায়ের বিরোদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে।