• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দরুদ পাঠের বিশেষ সময়

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ১২, ২০২০
দরুদ পাঠের বিশেষ সময়

প্রতিদিনের পঠিত আমলগুলোর মধ্যে আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় আমল হচ্ছে তাঁর প্রিয় রাসুলের ওপর দরুদ পাঠ করা। ফজিলতপূর্ণ এ দরুদ পাঠের আমল যেকোনো সময়ই করা যায়। তবে বিশেষ কিছু সময়ের ক্ষেত্রে দরুদ পাঠ করার নির্দেশনা হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। এখানে বিভিন্ন সময়ে দরুদ পাঠের কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো—

নবীর নাম শুনে দরুদ পাঠ করা

মালেক বিন হুয়াইরিস (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণিত, একদা আল্লাহর রাসুল (সা.) মিম্বারে আরোহণ করেন। প্রথম ধাপে চড়েই বলেন, আমিন। অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে চড়ে বলেন, আমিন। অনুরূপ তৃতীয় ধাপেও চড়ে বলেন, আমিন। অতঃপর তিনি (এর রহস্য ব্যক্ত করে) বলেন, “আমার কাছে জিবরাঈল উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘হে মুহাম্মদ! যে ব্যক্তি রমজান পেল অথচ পাপমুক্ত হতে পারল না আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন।’

তখন আমি (প্রথম) আমিন বললাম। তিনি আবার বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে অথবা তাঁদের একজনকে জীবিতাবস্থায় পেল অথচ তাকে দোজখে যেতে হবে, আল্লাহ তাকেও ধ্বংস করুন।’ এতে আমি (দ্বিতীয়) আমিন বললাম। অতঃপর তিনি বলেন, ‘যার কাছে আপনার (নাম) উল্লেখ করা হয় অথচ সে আপনার উপর দরুদ পাঠ করে না, আল্লাহ তাকেও ধ্বংস করুন।’ এতে আমি (তৃতীয়) আমিন বললাম।” (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৯০৭)

মজলিস শেষ করে দরুদ পাঠ করা

বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যেসব লোক কোনো মজলিসে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তাআলার স্মরণ করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরুদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮০)

আজানের পর দরুদ পাঠ করা

বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শোন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বলো। অতঃপর আমার ওপর দরুদ পাঠ করো। কেননা যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন…। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৫)

শুক্রবার বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা

আওস ইবনু আওস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমার দিন। এদিন আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এদিনই তাঁর রুহ কবজ করা হয়েছিল, এদিন শিঙায় ফুৎকার দেওয়া হবে এবং এদিনই বিকট শব্দ করা হবে। কাজেই এদিন তোমরা আমার ওপর বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। আওস ইবনে আওস (রা.) বলেন, লোকেরা বুঝতে চাচ্ছিল আপনার শরীর তো জরাজীর্ণ হয়ে মিশে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ মাটির জন্য নবী-রাসুলদের দেহ হারাম করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

মোনাজাতের আগে দরুদ

নামাজের পর মোনাজাতের আগে দরুদ পড়াও দোয়া করার আদবগুলোর অন্যতম আদম। যা রাসুল (সা.) নিজেই তাঁর প্রিয় সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন। ফাজালাহ ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোককে নবী (সা.) তাঁর নামাজের মাঝে দোয়া করতে শুনলেন, কিন্তু নবী (সা.)-এর ওপর সে দরুদ পড়েনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই ব্যক্তিটি তাড়াহুড়া করেছে। তারপর তিনি তাকে ডাকলেন এবং তাকে বা অন্য কাউকে বলেন, তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করলে সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাঁর গুণগান করে, তারপর রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে, তারপর তার মনের কামনা অনুযায়ী দোয়া করে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আল্লাহর রাসুল (সা.) এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।