একুশে নিউজ প্রতিবেদক:: সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিন (৩০) হত্যা মামলায় রিমান্ডকালে অসুস্থ হয়ে পড়া এএসআই আশেকে এলাহিকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে তাকে হাজির করা হয়।
কিন্তু স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালিদ উজ জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) সুস্থতাবোধ করলে আশেকে এলাহিকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি না দেওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। তবে পূনরায় তার রিমান্ড চাওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না তিনি।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ লাইন্স থেকে এএসআই আশেক এলাহীকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন ২৯ অক্টোবর তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালতের বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু রিমান্ডে নেওয়ার একদিন পর ৩১ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মহিদুল ইসলামসহ আট সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। পিবিআইর পরিদর্শক আওলাদ হোসেনকে রায়হান হত্যা মামলার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদসরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবার পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান। নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ান মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতে থাকে। মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন।
মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম চালায়। নিহতের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনঃময়নাতদন্ত করা হয়। রায়হানের দেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন মেলে ফরেনসিক রিপোর্টে।
এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর পলাতক থাকলেও পুলিশ হেফাজতে থাকা কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ২০ অক্টোবর ও হারুনুর রশিদকে ২৪ অক্টোবর গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২২ অক্টোবর এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা।
রায়হান নিহত হওয়ার ঘটনায় ‘বৃহত্তর আখালিয়া (বারো হামছায়া) সংগ্রাম পরিষদ’র ব্যানারে এলাকাবাসী বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর রয়েছেন।