স্টাফ রিপোর্ট::
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটায় সিলেট সার্কিট হাউজে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ১১ জনের একটি প্রতিনিধি দল।
উপাচার্যের পদত্যাগ ও অন্যান্য দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় করবেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস আহমেদ তুহিন রয়েছেন।
এই বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যাবেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র নাফিসা আঞ্জুম ইমু জানান, সার্কিট হাউসে আলোচনা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ক্যাম্পাসে আসবেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে তার বক্তব্য জানাতে। ইতিমধ্যেই শাবিতে অবস্থান নিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছে, মুহাইমিনুল বাশার রাজ (ফিজিক্স), ইয়াসির সরকার (ফিজিক্স), নাফিসা আনজুম (লোকপ্রশাসন), সাব্বির আহমেদ (লোকপ্রাশাসন), আশিক হোসাইন মারুফ (ওশেনোগ্রাফি), সাবরিনা শাহরিন রশীদ (ফিজিক্স), সুদীপ্ত ভাস্কর (ফিজিক্স), শাহরিয়ার আবেদীন (ফিজিক্স), আমেনা বেগম (সিভিল), মীর রানা (অর্থনীতি) এবং জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।
উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অবরুদ্ধ উপাচার্যের জন্য প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির নেতা ও দুজন কাউন্সিলর খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি। ২৮ ঘণ্টা পর ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন তারা।
২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুলে দেন। এরপর ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, অসুস্থতার কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে প্রক্টরের পদ থেকে বৃহস্পতিবার আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবির মধ্যে জহির উদ্দিন আহমদ ও আলমগীর কবীরের অপসারণও ছিল।