• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ১৯, ২০২২
আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস

সত্য মিথ্যার পার্থক্য নির্দেশক গ্রন্থ আল কুরআনুল কারিম নাজিলের মাস রমজানুল মোবারকের আজ ১৭ তারিখ। রমজান মাসের আজকের দিনটি অসাধারণ তাৎপর্যের অধিকারী। আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস। হিজরি দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল আল্লাহর একত্ব ও তার পাঠানো রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী বিশাল সুসজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসী একটি ক্ষুদ্র দলের প্রত্যক্ষ সশস্ত্র লড়াই। তাতে মানুষের সব ধারণা নাকচ করে দিয়ে প্রায় উপকরণহীন মুষ্টিমেয় দলটিকে জয়ী করেন মহান রব্বুল আলামিন। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় নতুন অধ্যায়। তাই শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এ দিনটি অনন্য অবস্থান দখল করে রেখেছে।

ইসলামের বাণী মক্কায় ১৩ বছর ধরে তেমন প্রসার লাভ করতে পারেনি স্থানীয় কুরাইশদের বিরোধিতার কারণে। এ দিকে ইয়াছরিব পল্লী থেকে বায়তুল্লাহর জিয়ারতে আসা আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা ইসলামের নবী ও তার অনুসারীদের আহ্বান জানান নিজেদের জনপদে। আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানেরা সেখানে হিজরত করতে থাকেন। আল্লাহর নবীও একপর্যায়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাজিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে হিজরত করলেন। নবীর শুভাগমনে ইয়াছরিবের নাম হয়ে গেল মদিনাতুন নবী বা সংক্ষেপে মদিনা। নতুন জনপদটি হয়ে উঠল ইসলাম প্রচার ও প্রসারের নিরাপদ কেন্দ্র। মুসলমান হয়ে যাওয়া আওস-খাজরাজ গোত্রের সাথে বনু কায়নুকা, বনু নজির, বনু কুরায়জা ইত্যাদি ইহুদি গোত্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রচিত হয় মদিনার সনদ নামে পরিচিত পৃথিবীর প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র।

কিন্তু মক্কার কুরাইশরা শান্তিতে থাকতে চায়নি, মুসলমানদের শান্তিতে থাকতে দিতে চায়নি। তারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। ছোটখাট হামলাও চালাতে থাকে। এত দিন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলমানদেরকে শুধু ধৈর্যধারণের আদেশ করা হয়েছিল । এবার সশস্ত্র জিহাদের অনুমতি নিয়ে নাজিল হলো কুরআন মাজিদের কয়েকটি আয়াত। যেমন সূরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হলো ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো হচ্ছে, তাদেরকে (যুদ্ধের)অনুমতি দেয়া হলো এ জন্য যে, তারা নির্যাতিত হয়েছে। আর আল্লাহ তাদের সাহায্য করতে সক্ষম। তাদেরকে নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে যে, তারা বলে আমাদের প্রভু আল্লাহ।’

এভাবে সশস্ত্র পন্থায় কাফেরদের প্রতিরোধ করার অনুমতি লাভের পর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রস্তুত হলেন। কুরাইশ কাফেরদের সাথে আল্লাহর নবী ও তার সাথীদের কয়েকটি ছোটখাট সংঘর্ষের পর প্রথম সরাসরি সশস্ত্র মোকাবেলা হয় মদিনা থেকে বেশ দূরে বদর প্রান্তরে। কিন্তু দু’পক্ষে কোন দিক দিয়েই সমতা ছিল না। আল্লাহর নবীর সাথে মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ। তারা প্রায় নিরস্ত্র। অপরপক্ষে আবু জেহেলের নেতৃত্বে রয়েছে এক হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী।

লড়াই শুরুর আগে আল্লাহর নবী দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ, তুমি যদি চাও দুনিয়াতে তোমার ইবাদত করার কেউ না থাকুক, তাহলে এই ক্ষুদ্র দলটিকে নিশ্চিহ্ন হতে দাও। আল্লাহ তা চাননি। আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায় ছিল বাহ্যিক ও উপকরণগত শক্তির অসারতা প্রমাণ করা। তাই প্রায় নিরস্ত্র মুষ্টিমেয় মুজাহিদদের কাছে পরাজিত হয় সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী। কুরাইশদের দর্প চূর্ণ হলো। তাদের পক্ষে নিহত হলো ৭০ জন। বন্দী হয় আরো ৭০ জন। আর মুসলমানদের মধ্যে শহীদ হন মাত্র ১৪ জন। যুদ্ধের এ ধরনের ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ অভাবনীয়। কিন্তু তা ছিল আল্লাহর কুদরতের নমুনা। তিনি স্বল্পসংখ্যক মানুষকে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী করে দেখিয়ে দিলেন অবিশ্বাসী লোকদের প্রকৃত দুর্বলতা ও অসহায়তা।

তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ জিহাদ। বিশ্বসভ্যতার মোড় ঘুরে যায় এ থেকে। বদরের প্রান্তর থেকে ইসলামের বিজয় ধারা সূচিত হয়। তাই প্রতি বছর ১৭ রমজান মুসলিম উম্মাহকে স্মরণ করিয়ে দেয় গৌরবময় বিজয়ের ইতিহাস, নতুনভাবে প্রত্যয় জাগায় খোদায়ী কুদরতের অসীমতার সামনে নিজের সব কামনা বিলীন করে দেয়ার ।